চরফ্যাশন প্রতিনিধি:
সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের জমির মালিকানা দাবি করে রাতের আঁধারে আশ্রয়নের ঘরগুলো ভেঙ্গে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘরগুলো ভেঙ্গে নেওয়ায় আশ্রয় হারিয়ে পথে বসেছে ২০ টি ছিন্নমূল পরিবার। গত রবিবার রাতে ভোলার চরফ্যাশন পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত আবাসন প্রকল্পের “নিলিমা আদর্শ গ্রাম” এ এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। এদিকে একমাত্র আশ্রয় হারিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অসহায় মানুষগুলো। তবে ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না।
চরফ্যাশন ভূমি অফিস এবং স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে চরফ্যাশন পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের একটি খাস জমিতে সরকারি অর্থায়নে নিলিমা আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ২০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয় ছিন্নমূল অসহায় ২০ পরিবারকে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আশ্রিত ওই ২০ পরিবারকে জায়গা জমি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বলে আসছিল স্থানীয় একটি গ্রুপ। তাদের দাবি বিগত সরকারের আমলে জোর করে তাদের মালিকানা জমি সরকারি খাস দেখিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর তোলা হয়েছিল।
মঙ্গলবার সকালে দেখা যায়, ২০ টি ঘরের মধ্যে ১ টি ঘর রয়েছে। পাশেই রয়েছেন ঘরটির বাসিন্দা পিয়ারা বেগম। বাকি ১৯ ঘর নাই, শুধু ভিটা পড়ে আছে। যে ঘরটি রয়েছে সেটিও খুলে নেওয়া হচ্ছে। এসময় স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ছবি তুলতে গেলে যুবদল নেতা পরিচয়ে দিয়ে মো. মমিন নামের এক ব্যক্তি ছবি তুলতে নিষেধ করেন।
পিয়ারা জানান, শেখা হাসিনাসরকার পতনের পর রাসেল, মমিন, সুমনসহ আরও কয়েকজন এসে তাদেরকে জানায়, এই জায়গা তাদের। শেখা হাসিনা সরকারের লোকজন জোর করে দখলে নিয়েছিল। এখন সবাইকে চলে যেতে হবে। পিয়ারা আরও জানান, গত ৮ সেপ্টেম্বর মাসে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট এবিষয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিল। কোন লাভ হয়নি। তাই দুইমাস পরে গত রবিবার রাতে লোকজন এসে সব ঘরের টিনের চালা বেড়া সরিয়ে নেয়। এখন অন্য কোথায় গিয়া আশ্রয় নিতে হবে।
মো. মমিন, রাসেল গ্রুপ সাংবাদিকদের জানান, এই জমি তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে রেকর্ডভুক্ত। সেটি দখল করে আওয়ামী লীগের সময় হতদরিদ্রদের জন্য ঘর দেওয়া হয়। তবে অসহায় ২০ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়নি তারা নিজেদের ইচ্ছায় ঘর ভেঙে নিয়ে গেছেন।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন আলমগীর মালতিয়া গণমাধ্যমকে জানান, তাদের কোনো কর্মীর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চরফ্যাশন উপজেলার এসিল্যানড সহকারী কমিশনার ( ভূমি) মোহাম্মদ আবুল হাসনাত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ওই জমির মালিকানা দাবি করে রাসেল নামের এক ব্যক্তি এসেছিলেন। তারা সরকারি গুচ্ছগ্রামের ভূমি বিএস রেকর্ডমূলে দাবি করছেন। কিন্তু কীভাবে তারা বিএস রেকর্ডে মালিক হলেন তেমন কোন প্রমাণ দেখাতে পারেন নি। কারণ এসএ কিংবা তার আগের সকল রেকর্ডপত্রে ওই ভূমি সরকারের নামে রয়েছে। এসিল্যন্ড আরও জানান, গুচ্ছগ্রামে এখন কোন ঘর দেখা যাচ্ছে না। খালি ভিটি পড়ে আছে। বাসিন্দারা অন্যত্র চলে গেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা কবে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়ার সংবাদ পেয়ে সোমবার সন্ধ্যা সরজমিন পরিদর্শন করেছেন। তিনি সাংবাদিকদেরকে জানান, যাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে এসিল্যান্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি উচ্ছেদকৃত ওই পরিবারগুলোকে দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।