1. admin@upokulbarta24.com : admin : Sohel Mahamud
  2. bangladesh@upokulbarta.news : যুগ্ম সম্পাদক : যুগ্ম সম্পাদক
  3. bholasadar@upokulbarta.news : বার্তা সম্পাদক : বার্তা সম্পাদক
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ছাত্র জনতার আন্দোলনে নিহত ও আহতদের স্বরণে চরফ্যাশনে স্বরণ সভা কক্সবাজারে নিষিদ্ধ স্কিনক্রিম বিক্রির অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৫০,০০০৳ জরিমানা সাতক্ষীরার কলারোয়ায় শিশু শ্রম ও শিশু অধিকার বিষয়ক সিসিডিবি’র কর্মশালা সাতক্ষীরায় শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন শীর্ষক মতবিনিময় শোক বিজ্ঞপ্তি : জান্নাতুল বাকীতে ডা. রাশেদার দাফন সম্পন্ন জমির মালাকানার দাবিতে আশ্রয়নের ঘরগুলো ভেঙ্গে নিয়েছে প্রভাবশালী মহল আশ্রয়হীন ২০ পরিবার সাতক্ষীরার শ্যামনগরে পরিত্যক্ত পিস্তল উদ্ধার বাগমারায় চাঁদাবাজ ও জমি-পুকুর দখল নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ফকিরহাটে ৫ হাজার ৪০০ কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সরকারি বীজ বিতরণ কুইন আইল্যান্ড নামে খ্যাত ভোলার ২০০ বছরের ঐতিহ্য মহিষের দই

কুইন আইল্যান্ড নামে খ্যাত ভোলার ২০০ বছরের ঐতিহ্য মহিষের দই

আশিকুর রহমান শান্ত .ভোলা প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৬০ বার পঠিত

ভোলা প্রতিনিধি:

দেশের বৃহত্তম দ্বীপ জেলা ভোলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রাচুর্যের কারণে এই জেলাকে ডাকা হয় ‘কুইন আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ’ নামে। জেলার পূর্ব দিকে মেঘনা নদী, পশ্চিমে তেঁতুলিয়া, উত্তরে ইলিশা আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। জলবেষ্টিত জেলা ভোলার প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী খাবার মহিষের দই। স্থানীয়ভাবে এটি ‘বৈষা দই’ নামে পরিচিত।

উৎসব-পার্বণে এর চাহিদা অনেক বেশি। দই তৈরিতে দুধ আসে জেলার বিভিন্ন চরের মহিষের বাথান থেকে। এ উত্তাল জলরাশির মধ্যে জেগে ওঠা চরে সবুজ ঘাসের বুকে বিচরণ করে বেড়ায় মহিষ। ভোলা জেলার ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১২২০ সালের দিকে ভোলায় প্রথম চর জাগতে শুরু করে। প্রায় ১০০ বছর পর, ১৩০০ সালের দিকে এখানে চাষাবাদ শুরু হয়। ১৩৩৫ সাল নাগাদ দক্ষিণ শাহবাজপুরে (ভোলার আদি নাম) বসতি স্থাপন শুরু হয়। শাহবাজপুর ছাড়াও আশপাশের নদীতে জেগে ওঠে নতুন নতুন অসংখ্য চর। তখন থেকে শুরু হয় মহিষ লালন-পালন। সেখান থেকেই মহিষের দুধের কাঁচা টক দধির প্রচলন। তা ধীরে ধীরে নাম যশে বাড়তে থাকে এর চাহিদা। বর্তমানে সারা বছরই কাঁচা বৈষা দইয়ের চাহিদা থাকে। এখানকার অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম উপাদান এটি। এ টক দধি গুড়, মিষ্টি অথবা চিনি দিয়ে খাওয়া যায়। এ ছাড়াও এ দুধের ছানার রসগোল্লা, রসমালাইয়ের স্বাদও অতুলনীয়। এ টক দধি সব সামাজিক, পারিবারিক ও ঘরোয়া অনুষ্ঠানে থাকতেই হবে। এ যেন এক ঐতিহাসিক রীতিনীতি। খাবার হজমে, ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যায় কাঁচা দুধের দধি উপকারিতা রয়েছে।

এ ছাড়াও, এই দই অধিক পরিমাণ প্রোটিন সমৃদ্ধ। এটি রক্তচাপ কমায় ও হাড়ের মজবুত গঠনেও ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ পুষ্টিমান বিবেচনায়ও এটি মানবদেহের জন্য একটি উপকারী খাবার হিসেবে বিবেচ্য। এ এলাকার মানুষ খাবারের শেষে ভাতের সঙ্গে দই খেয়ে থাকে। দই, চিড়ার সঙ্গে হালকা মুড়ি ও চিনি মিশিয়ে মজা করে খাওয়া যায়। গরমের মৌসুমে দইয়ের সঙ্গে হালকা পানি ও চিনি মিশিয়ে ঘোল তৈরি করা হয়। এ ঘোল গরমের দিনে মানবদেহকে ঠান্ডা রাখে। অনেকে কুটুম বাড়িসহ পছন্দের মানুষের উপহার কিংবা দেশের বাইরেও প্রিয়জনদের কাছে এখানকার দধি পাঠিয়ে থাকে। কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান হলে দধি দিয়ে আপ্যায়ন করা প্রায় বাধ্যতামূলক। শীতে হাঁসের মাংসের সঙ্গে টক দই আর খেজুরের গুড় ভোজনরসিকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় খাবার।

জেলায় বর্তমানে প্রতি দেড় লিটারের টালী দই বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৫০ টাকায় এবং দুই লিটারের বড় টালী ৩৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। ঈদকে কেন্দ্র করে দাম আরও বেড়ে যায়। ঈদ শুরুর অন্তত দুই সপ্তাহ আগ থেকে দুধ সংগ্রহে রাখেন বিক্রেতারা। ঈদের পরও বেশ কিছুদিন এর চাহিদা থাকে তুঙ্গে। উপকূলীয় অঞ্চলের এই টক দইয়ের চাহিদা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে খামারিরা জানান, আজকাল ঢাকার লালমাটিয়া, মোহম্মদপুর, দারুস সালাম ও মিরপুরের অরগানিক খাবারের দোকানগুলো ভোলা থেকে ভৈষা দই কিনে নিয়ে বিক্রি করছে এবং চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। ঢাকার দোকানগুলোতে প্রতি দেড় লিটারের টালী দই বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা এবং ২ লিটারের বড় টালী বিক্রি করা হয় ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, ভোলায় ৩ হাজার ২ শত ৫০ জন মহিষ পালনকারী (খামারী) জেলায় ১ লক্ষ ২৪ হাজার মহিষ পালন করছে। তাদের খামার গুলো থেকে গড়ে প্রতি বছর ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার মেট্রিক টন মহিষের দুধ উৎপাদন হয়। জেলায় বছরে দুধের চাহিদা রয়েছে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ৬ শত মেট্রিক টন। গড়ে প্রতিদিন মহিষ থেকে ১৫ থেকে ২০ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদন হয়। বছরে জেলায় দুধের ঘাটতি আছে ১৮ হাজার ৬ মেট্রিক টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলায় মোট দুধ উৎপাদন হয়েছে ১ লক্ষ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৫ শত মেট্রিক টন দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এছাড়াও জেলায় মহিষের নিরাপত্তার জন ৪৪ কিল্লা (দুর্যোগে মহিষের আশ্রয় নেওয়ার জায়গা) নিমান করা হবে বলে জানা যায়। এর মধ্যে সরকারি ও বে-সরকারি ভাবে ২১ টি কিল্লা ইতিমধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ৪ টি কিল্লার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ৪ টি কিল্লা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। বে-সরকারি ভাবে পল্লীকর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের এসইপি প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা ৫ টি কিল্লা নির্মান করেছে। পরিবার উন্নয়ন সংস্থা (এফডিএ) ২ টি কিল্লা নির্মান করে।জেলায় এখনো কিল্লার চাহিদা রয়েছে ৭০ টির।

প্রায় ৪০ বছর ধরে বাথানভিত্তিক মহিষের আবাদ ও দইয়ের ব্যবসা করছেন ভোলার শাহিন আলম। তিনি জানান, মহিষের দুধ ঘন। এতে পানির পরিমাণ কম থাকায় মাটির পাতিলে দই পাতলে সে পানিটুকুও শুষে নেয়। ফলে নির্ধারিত সময়ের পর দইয়ের ওপর ঘন মাখন জমে। প্রথমে একটি মাটির পাত্র (টালি) পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর দুধগুলোকে ভালোভাবে ছেকে মাটির পাত্রে স্থির জায়গায় রেখে দিলে হয়ে যাবে মুখরোচক টক দই। গরমের দিনে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা এবং শীতের দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগে দই তৈরিতে।

তিনি আরও জানান, চরাঞ্চলে পর্যাপ্ত কিল্লা (দুর্যোগে মহিষের আশ্রয় নেওয়ার জায়গা) না থাকায় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় নিখোঁজ হয় অনেক মহিষ। তাই খামারিরা মহিষ পালনে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছেন। ভোলার ঐতিহ্যবাহী মহিষের দুধের ‘টক দই’ ধরে রাখতে হলে সরকারি-বেসরকারি কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

ভোলা শহরের আদর্শ দধি ভাণ্ডারের মালিক মো. আব্দুল হাই জানান, ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তার বাবা চরে মহিষ পালন করতেন। সেই মহিষের দুধের ওপর নির্ভর করেই তিনি দইয়ের দোকান দিয়েছেন। বর্তমানে বাবার পরিবর্তে নিজে ব্যবসার হাল ধরেছেন। এখন দইয়ের বেশ চাহিদা থাকলেও দুধের সরবরাহ কম থাকায় চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছেন না। খাদ্যসংকটসহ নানা কারণে চরাঞ্চলে মহিষ পালন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে বলে জানান আব্দুল হাই।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম খাঁন বলেন, ভোলায় জনবসতি গড়ে ওঠার সাথে সাথে মানুষ উপার্জনের জন্য মহিষ, গরু-ছাগল পালন শুরু করেন। বিশেষ করে অবস্থাসম্পন্ন গৃহস্থ পরিবারগুলো শত শত মহিষ পালন করে। যুগ যুগ ধরে বহু পরিবার এখানে মহিষ ও দই বিক্রির পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। দুধ-দই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন চরে গড়ে উঠেছে শত শত মহিষ বাথান। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব বাথান থেকে গোয়ালরা টনে টনে দুধ নিয়ে আসে শহরের বাজার গুলোতে। গোয়ালদের কাছ থেকে প্রয়োজন মতো দুধ কিনে নেয় দই ব্যবসায়ীরা। এরপর বিভিন্ন ধরনের টালিতে দুধ বসিয়ে প্রস্তুত করা হয় দই।

তিনি আরো বলেন, ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসাবে ইতিমধ্যে ভোলার ২ শ বছরের ঐতিহ্যবাহী মহিষের দুধের কাঁচা দইকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ভোলার জেলা প্রশাসক পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ বছরের ২৪ সেপ্টেম্বরে ২৯ নম্বর শ্রেণিতে পণ্যটি জিআই-৫৫ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা