ইব্রাহিম আকতার আকাশ,ভোলা:
ভোলায় অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বিতীয় ধাপের ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন। দু-একটি বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও কোথাও বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচন উপলক্ষে সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সকালের দিকে ভোটারের উপস্থিতি একটু কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে কেন্দ্র আসতে শুরু করেন। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতীহিনভাবে চলে এ ভোটগ্রহণ। সকল প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই না হলেও দু-একজন প্রার্থীর মধ্যে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। ৪টার পর শুরু হয় ভোট গণনার পালা। এরপর একে একে সকল প্রার্থীর ফলাফল তৈরীর মাধ্যমে বিজয়ী প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ফলাফলও প্রকাশ করেন জেলা ও উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাগণ।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, ভোলা সদর উপজেলায় মোটরসাইকেল প্রতীকে ৭১ হাজার ১শ’ ৫৫ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান পদে বেসরকারীভাবে বিজয় লাভ করেছেন মোহাম্মদ ইউনুছ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোশারেফ হোসেন (আনারস প্রতীক) পেয়েছেন ৪০ হাজার ৮৭ ভোট।
অপরপ্রার্থী মোহাম্মদ ইউসুফ (দোয়াত-কলম) পেয়েছেন ৮শ’ ৯ ভোট। ভাইস চেয়ারম্যান পদে উড়োজাহাজ প্রতীকে ৫৩ হাজার ৯শ’ ৫৫ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে বিজয় লাভ করেছেন শাহ আলী নেওয়াজ পলাশ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আজিজুল ইসলাম (চশমা) পেয়েছেন ২৬ হাজার ৫শ ৫৩ ভোট। এছাড়া টিউভওয়েল প্রতীকে মোঃ হুমায়ুন কবির পেয়েছেন ১ হাজার ২শ’ ৮২ ভোট, বই প্রতীকে মোঃ মিজানুর রহমান পেয়েছেন ১৮ হাজার ৩শ’ ১৮ ভোট।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাঁস প্রতীকে ৩২ হাজার ৬শ’ ৯২ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে বিজয় লাভ করেছেন ছালেহা আখতার চৌধুরী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ফারাহ আক্তার (নিশা) পেয়েছেন বৈদ্যুতিক পাখা প্রতিকে পেয়েছেন ২৪ হাজার ৮শ’ ৫ ভোট।
এছাড়া অপর প্রার্থী ফরিদা ইয়াসমিন (প্রজাপতি প্রতিক) পেয়েছেন ২২ হাজার ১২ ভোট, রাবেয়া বসরী (ফুটবল প্রতিক) পেয়েছেন ১৮ হাজার ২শ’ ৮ ভোট। জান্নাতুল ফেরদাউস (পদ্মফুল প্রতিক) পেয়েছেন ৭ হাজার ৩শ’ ২৭ ভোট, কলস প্রতিকে রেহানা ফেরদাউস পেয়েছেন ২ হাজার ৫শ’ ৪৩ ভোট। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে ২৮ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছে ২৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। সর্বমোট ভোলা সদর উপজেলায় মোট ভোটের হার ছিল ২৬ শতাংশ।
দৌলতখান উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন মনজুর আলম খান (কাপ-পিরিচ) প্রতিক। তিনি পেয়েছেন ১৪ হাজার ১শ’ ৭২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী মামুনুর রশীদ চৌধুরী (হেলিকপ্টার) প্রতিক পেয়েছেন ১১ হাজার ৮শ’ ৯৭ ভোট। অপর প্রার্থী আনোয়ার হোসেন (আনারস) প্রতিক পেয়েছেন ১১ হাজার ৮শ’ ৫৪ ভোট। মোঃ ইয়াছিন (মোটর সাইকেল) প্রতিক পেয়েছেন ১২ হাজার ৩শ’ ২১ ভোট। আনিছুর রহমান বাবুল (দোয়াত-কলম) প্রতিক পেয়েছেন ৭শ’ ৯ ভোট।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন আনোয়ারুল ইসলাম (চশমা) প্রতিক। তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ২শ’ ৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী মোঃ সেলিম (টিইউবওয়েল) প্রতিক পেয়েছেন ১২ হাজার ২শ’ ১৬ ভোট। উড়োজাহাজ প্রতিকে অনিকুল ইসলাম পেয়েছেন ১১ হাজার ৩শ’ ৪১ ভোট এবং তালা প্রতিকে আবদুল অদুদ পেয়েছেন ৬ হাজার ৭শ’ ৫৭ ভোট।
এছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন কহিনুর ওবায়েদ উল্যাহ (কলস) প্রতিক। তিনি পেয়েছেন ২১ হাজার ১শ’ ৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী বিবি ফাতেমা (সেলাই মেশিন) প্রতিক পেয়েছেন ১৩ হাজার ৫শ’ ৫৯ ভোট। এছাড়া প্রজাপতি প্রতিকে আইননু নাহার রেনু বেগম পেয়েছেন ৭ হাজার ৩শৎ ১৪ ভোট। ফুটবল প্রতিকে শিউলি বেগম পেয়েছেন ৬ হাজার ৫শ’ ৪৬ ভোট। দৌলতখানে ভোটের হার ছিল ২৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ৮১টি কেন্দ্রের ঘোষিত ফলাফলে চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছেন (আনারস প্রতিক) জাফর উল্লাহ চৌধুরী। তিনি পেয়েছেন ২৯ হাজার ২শ’ ৮৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আবুল কালাম (দোয়াত-কলম) পেয়েছেন ১৮ হাজার ৯শ’ ৬৪ ভোট। অপর প্রার্থী রাসেল আহমেদ মিয়া (কাপ-পিরিচ) পেয়েছেন ১৩ হাজার ৬শ’ ৩৫ ভোট।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছেন (তালা প্রতিকে) মোহাম্মদ আলী হীরা। তিনি পেয়েছেন ২৭ হাজার ২শ’ ৬৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হাসিব চৌধুরী বাঁধন (উড়োজাহাজ প্রতিক) পেয়েছেন ১৫ হাজার ১শ’ ৩৪ ভোট। অপর প্রার্থী ইসমাইল (টিইউবওয়েল প্রতিক) পেয়েছেন ১০ হাজার ৮শ’ ৭২ ভোট, মনসুরুল আলম (চশমা প্রতিক) পেয়েছেন ৭ হাজার ৬শ’ ৬৪ ভোট।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছেন (কলস প্রতিক) আকতারুন নেছা রিনু। তিনি পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৪শ’ ২৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাহফুজা ইয়াসমিন (প্রজাপতি) পেয়েছেন ১৪ হাজার ৬শ’ ৯৯ ভোট। অপর প্রার্থী রাজিয়া সুলতানা (ফুটবল প্রতিক) পেয়েছেন ৮ হাজার ১শ’ ৬৪ ভোট। বোরহানউদ্দিনে ভোট পড়েছে শতকরা ৩১ শতাংশ। উপজেলা নির্বাচন অফিসার মঞ্জুর হোসেন জানান, কোন অপ্রতিকর ঘটনা ছাড়াই এ নির্বাচন সম্পূর্ণ হয়েছে। যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদেরকে নির্বাচন কমিশনের বিধিমেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভোলার ৩ উপজেলার মোট ৩৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১২ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন প্রার্থী। ভোলার এই ৩ উপজেলায় মোট ভোটার ছিল ৭ লক্ষ ৫১ হাজার ৪শ’ ৪৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ৩ লক্ষ ৯১ হাজার ৬শ’ ৪৭ জন ও নারী ভোটার সংখ্যা ৩ লক্ষ ৫৯ হাজার ৮শ’ ৪১ জন। হিজড়া ভোটার ৬ জন। এর মধ্যে ভোলা সদর উপজেলায় ৩জন এবং বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ৩ জন।